নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের তৎকালীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত রোববার মতিঝিল থানায় এ মামলাটি করা হয়। সোমবার সকালে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে খালেদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। গত রোববার মতিঝিল থানায় সিআইডির পরিদর্শক মো. ইব্রাহিম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন। তবে খালেদ ছাড়া অন্য উল্লিখিত আসামিরা অর্থপাচারে খালেদকে সহযোগিতা করেছেন মর্মে জানা গেছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের ব্যাংক হিসাবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার অন্য আসামি আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ও দীন মজুমদারের সহায়তায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাচার করেছেন খালেদ। ২০১০ সাল থেকে তিনি এই তিনটি দেশে ৭০ বার ভ্রমণ করেছেন। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকালেও মালয়েশিয়ার মাইব্যাংকের একটি আর এইচবি ব্যাংকের একটি; সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকের একটি এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটি এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া (৪৬), ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অবৈধ প্রভাব বিস্তার ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুরের রেলভবন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল জোন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব প্রকল্পের কাজের টেন্ডার একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। পছন্দমতো প্রকল্পের কাজ নিজের মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রপার্টিজের নামে এসব কাজ করায়ত্ত করেন।
অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজের জন্য অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২-১০ শতাংশ হারে নগদ চাঁদা আদায় করেন। এ ছাড়া মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের বাজার, কোরবানির পশুর হাট, সিএনজি স্টেশন, গণপরিবহন থেকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনসহ ‘ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে’ অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমেও তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ আয় করেন। তার মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রপার্টিজ থেকে তিনি অপরাধকার্য পরিচালনা করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এসব অপরাধলব্ধ আয় তার নিজ নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের হিসাবগুলোয় লেনদেন করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরারপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।